বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৩

হরতালে বিকল্প উপায়ে পরীক্ষা নেয়ার চিন্তা

দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ায় বিকল্পভাবে পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার চিন্তা করছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেছেন, সব বিকল্প নিয়েই আমরা চিন্তা করছি। যে কোন উপায়ে পরীক্ষা নেয়া হবে। আগামী ৪ঠা নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা। শেষ হবে ২০শে নভেম্বর। এতে প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। তত্ত্বাধায়ক সরকার ইস্যুতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। ইতিমধ্যে টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল পালিত হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চিন্তার শেষ নেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। হরতালের কারণে ইংলিশ মিডিয়ামের পরীক্ষা স্থগিত করেছে বৃটিশ কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ। বিএনপি ওই পরীক্ষা হরতালের আওতামুক্ত ঘোষণা করলেও নিরাপত্তা ইস্যুতে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তিন দিন হরতালে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ হারিয়েছে। প্রাণ হারিয়েছে নিরীহ মানুষ। নভেম্বর ও ডিসেম্বর পরীক্ষার মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ দুই মাসে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াও অন্তত ৬৯টি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এসব পরীক্ষায় অংশ নেবে ৫৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। পরীক্ষা চলাকালে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হলে বিপাকে পড়তে হবে শিক্ষার্থীদের। এ কারণে রাজনৈতিক সমঝোতা চান শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। সব বিষয়ে চিন্তা করে হরতাল বা অন্য কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকলে ওই দিনের পরীক্ষা শুক্র বা শনিবার নেয়া হবে। ২১শে নভেম্বর থেকে অষ্টম শ্রেণী ছাড়া অন্যান্য শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু ঠিক সময়ে পরীক্ষা নেয়া যাবে কিনা, তা স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারছে না। ২০শে নভেম্বর থেকে শুরু হবে সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। চলবে ২৮শে নভেম্বর পর্যন্ত। এ পরীক্ষায় প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর অংশ নেয়ার কথা। এ পরীক্ষার পরপর ৭-১৮ই ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও শুরু হচ্ছে সম্মান প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১লা নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা। পাঁচটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হবে ২৩শে নভেম্বর। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ১৬ই নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে চলবে ২৫শে নভেম্বর পর্যন্ত। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাও হবে নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মধ্যে। অন্যতম বৃহৎ এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভর্তি পরীক্ষার্থীরাও চিন্তিত। ফলে পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। এ ছাড়া পরীক্ষা গ্রহণের কার্যক্রম নিয়ে চিন্তিত শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। রাজনৈতিক অস্থিরতায় ও পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ও অস্থিরতার মুখে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশ করা যাবে কিনা, তা-ই এখন সবার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু পরীক্ষাই নয়, পরীক্ষার পূর্ব মুহূর্তে ক্লাস ও প্রস্তুতি নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিরোধী দল ইতিমধ্যে আভাস দিয়েছে, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই হরতালসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দেবে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায়’ যা যা করার তা-ই করা হবে। সরকার ইতিমধ্যে রাজধানীতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। এবার এইচএসসিতে উত্তীর্ণ ৭ লাখের বেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। গত বছর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারা শিক্ষার্থীরাও এবার নতুন করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। ১লা নভেম্বর থেকে ২৭শে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিনই ভর্তি পরীক্ষা চলবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, জাহাঙ্গীরনগরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা শুধু উদ্বিগ্নই নন, আদৌ পরীক্ষা হবে কিনা, সেটাই এখন তাদের চিন্তার কারণ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে সমঝোতা না হলে এবার ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকতে হবে। গতবারও রাজনৈতিক কারণে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছিল। স্থগিত করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাও। অভিভাবক সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নীপা সুলতানা বলেন, আমরা বাচ্চাদের পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছি। ছেলেমেয়েরা কিভাবে পরীক্ষা দেবে তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তাসলিমা বেগম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য আমরা দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। তিনি বলেন, পরীক্ষার দিন হরতাল বা অন্য কর্মসূচি থাকলে তা বিকল্পভাবে নেয়া হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন